চিয়া সিড বা বীজ কি?
Chia Seeds | চিয়া সিড হচ্ছে সালভিয়া হিস্পানিকা নামক মিনট প্রজাতির উদ্ভিদের বীজ। চিয়া সিডস মুলত মধ্য আমেরিকা ও মেক্সিকোর মরুভূমি অঞ্চলে বেশি জন্মায়। প্রাচীন অ্যাজটেক জাতির খাদ্য তালিকায় এটি অন্তর্ভুক্ত বলে বিশেষজ্ঞরা দাবি করে থাকে। এগুলো দেখতে অনেকটা তোকমা দানার মতো।
চিয়া বীজের পুষ্টিগুন
পৃথিবীর পুষ্টিকর খাবারগুলোর মধ্যে চিয়া সিড অন্যতম। অ্যাজটেক জাতির লোকজন মনে করতো এইটা তাদের সক্তি ও সাহস জোগাবে। তারা একে সোনার চেয়েও মুল্যবান মনে করতো।
এতে রয়েছে ওমেগা-৩, ফাইবার, ম্যাংগানিজ, ফসফরাস, প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বো হাইড্রেট। পাশাপাশি এতে রয়েছে, ভিটামিন বি, থায়ামিন, নিয়াসিন আয়রন, দস্তা, ক্যাফিক এসিড, ম্যাগনেসিয়াম।
চিয়া বীজ খাওয়ার উপকারিতা
বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতি ২৮ গ্রাম চিয়া সিডে রয়েছে ১১ গ্রাম ফাইবার, ৪ গ্রাম প্রোটিন, ফ্যাট ৯ গ্রাম (যার ৫ গ্রাম ওমেগা ৩)। এছাড়াও রয়েছে ক্যালসিয়াম, ম্যাংগানিজ, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস,, জিঙ্ক, ভিটামিন-বি, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি-১, ভিটামিন বি-২। চলুন এ পর্যায়ে Chia seeds বা বীজ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক-
১) প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
চিয়া সিডস এ রয়েছে প্রচুর পরিমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ইতিবাচক প্রভাব নিয়ে আসবে। যদিও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট নিয়ে গবেষকদের ভিন্ন ভিন্ন মতামত রয়েছে।
২) প্রোটিন চাহিদা পূরণ
এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার প্রোটিন। যা আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও উপকারী। আমরা সাধারণত মাছ মাংস থেকে প্রোটিন আহরন করে থাকি। আজকাল বাজারে ভেজাল পন্যের ছড়াছড়ি। আপনার শরীরের প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে চিয়া হতে পারে একটি দারুন সমাধান। প্রতি ২৮ গ্রাম পরিমান চিয়া সিডে প্রায় ৪ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়।
৩) হাড়ের সুস্থতা
হাড়ের সুস্থতার জন্য প্রোটিনের পাশাপাশি পর্যাপ্ত ক্যালসিয়ামও প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞদের মতে প্রোটিনের পাশাপাশি Chia seeds এ রয়েছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস যা হাড়ের সুস্থতা নিশ্চিতে সাহায্য করে।
৪) ফ্যাটি অ্যাসিডের উৎস
গবেষকরা দাবি করেন Chia seeds এ স্যালমন মাছের চেয়েও বেশি ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। যা আপনার হার্ট সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
৫) Chia seeds ওজন কমাতে সাহায্য করে
প্রোটিনের পাশাপাশি এতে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় ফাইবার। ফাইবার প্রচুর পরিমান পানি শোষণ করে। এতে আপনার পেট ভরা ভরা মনে হবে। আর এই কারনের আপনার ক্ষুদা কম মনে হবে। বা অল্প খেলেই পেট ভরে গেছে বলে মনে হয়। যা আপনাকে কম ক্যালরি গ্রহনে তথা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
চিয়া সিড স্বাদ ও গন্ধবিহীন একটি খাবার। এটা খাওয়ার জন্য রান্না করারও দরকার হয় না। পানিতে ভিজিয়ে সহজেই খাওয়া যায় চিয়া সিড। চাইলে ওটস, পুডিং, জুস, স্মুথি ইত্যাদির সঙ্গে মিশিয়ে খেয়ে নেয়া যায়। এ ছাড়া কেউ চাইলে টকদই, সিরিয়াল, রান্না করা সবজি বা সালাদের ওপরে ছড়িয়েও খেতে পারেন।
চিয়া সিড কুসুম গরম পানিতে ২০ থেকে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। সকালে খালি পেটে অথবা রাতে ঘুমানোর আগে চিয়া সিডসহ পানীয়টি পান করুন।
চাইলে স্মুথি বানিয়ে খাওয়া যায়। টক দই, চিয়া সিড ও শসা দিয়ে স্মুথি বানিয়ে বিকেলে নাশতা হিসেবে খাওয়া যেতে পারে সুপারফুডটি।
২ কাপ নারকেলের পানির সঙ্গে পছন্দের ফলের রসের সঙ্গে ২ থেকে ৩ টেবিল চামচ চিয়া বীজ দিয়ে মিশ্রণ বানিয়ে নিন। প্রয়োজনে পানিও যোগ করতে পারেন। ২০ থেকে ৩০ মিনিট রেখে খেয়ে নিন।
মূল কথা
পুষ্টিবিদরা জানান, চিয়া সিডে থাকা ওমেগা-৩ হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে এবং ক্ষতিকর কোলেস্টেরল দূর করতে কাজ করে। দিনে দুই চা চামচ চিয়া সিড শরীরের শক্তি দেয় এবং কর্মক্ষমতা বাড়ায়।
প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় চিয়া সিড রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করে। মেটাবলিক সিস্টেমকে উন্নত করার মাধ্যমে এটি ওজন কমাতে সহায়তা করে। এটি রক্তে চিনির প্রবাহ স্বাভাবিক রাখে বলে ডায়বেটিসের ঝুঁকি কমে।
হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় চিয়া সিড দারুণ কাজ করে। কারণ এতে আছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম। চিয়া সিড কোলন পরিষ্কার রাখতে কাজ করে বলে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমে।
চিয়া সিড শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে আনে। দূর করে অ্যাসিডিটির সমস্যা।
চিয়া সিড ভালো ঘুম হতেও সাহায্য করে বলে বিশ্বাস করেন চিকিৎসকরা। শুধু কি তাই! হাঁটু ও জয়েন্টের ব্যথা কমায়। সুন্দর রাখে ত্বক, চুল ও নখ।