Mixed Seeds | মিক্সড সিড
শুধু সবজি বা মাছ-মাংসই নয়, Mixed Seeds ও দানাতেও রয়েছে শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি। বাজার চলতি বিভিন্ন দানা কিন্তু পুষ্টির পাওয়ারহাউজ। শরীরকে শক্তিশালী ও স্বাস্থ্যকর করে তুলতে এই বীজগুলির জুড়ি মেলা ভার।
প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর এই বীজগুলির মধ্যে তরমুজ বীজ , ফ্ল্যাক্স, সেসামে, কুমড়ো ও সূর্যমুখীর দানা গুণে অসাধারণ। এগুলি ওজন কমাতেও দারুণ কাজে লাগে।
মিষ্টি কুমড়ার বীজ
রঙিন শাকসবজির মধ্যে অন্যতম মিষ্টি কুমড়া। অনেকেই হয়তো জানেন না মিষ্টি কুমড়ার বীজও শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী। এই বীজ আমরা খাওয়ার অযোগ্য ভেবে ফেলে দিই। তবে পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ মিষ্টি কুমড়ার বীজ হতে পারে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উৎস।
মিষ্টি কুমড়ার বীজ উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের ভালো উৎস। কোনো কোলেস্টেরল নেই বলে এটি একটি নিরাপদ প্রোটিনের উৎস। এই বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস কপার,ভিটামিন ই, আয়রন ও ফাইবার।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:
মিষ্টি কুমড়ার বীজে রয়েছে ভিটামিন ই, জিঙ্ক এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেগুলো শরীরের ইমিউনিটি বাড়াতে সাহায্য করে। ইমিউনিটি ভালো থাকলে যেকোনো রোগ সহজে প্রতিরোধ করা যায়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: (Mixed Seeds)
মিষ্টি কুমড়ার বীজে থাকা ম্যাগনেশিয়াম রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করে। ফলে ডায়াবেটিস রোগীরা এটি গ্রহণ করলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
ভালো ঘুম:
কুমড়োর বীজের ট্রিপটোফ্যান নামক অ্যামিনো এসিড ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে।
হার্ট ভালো রাখে:
এই বীজের ম্যাগনেশিয়াম রক্তচাপ কমাতে ভূমিকা রাখে। খারাপ কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডও কমায়। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়।
ওজন হ্রাস করে:
মিষ্টি কুমড়ার বীজ প্রোটিন ও ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় ক্ষুধা নিবারণ করার পাশাপাশি খাওয়ার প্রবৃত্তি কমায়। ওজন কমাতে চাইলে খাদ্যতালিকায় এটি যোগ করা উচিত ।
হাড় মজবুত করে:(Mixed Seeds)
এই বীজে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম থাকায় এটি বোন ডেনসিটি বৃদ্ধি করে হাড়কে মজবুত করে।
সূর্যমুখী বীজ
এন্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান সূর্যমুখীর বিচিতে রয়েছে উন্নতমানের ভিটামিন ‘ই’ যা এন্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে ও শরীরের বিভিন্ন অংশের জ্বালাপোড়া কমায়। ক্যান্সার প্রতিরোধক এই বীজে আছে উচ্চমানের ফাইটোস্টেরল ও লিগন্যানস যা ক্যান্সার প্রতিরোধক।
সূর্যমুখীর বীজ নিয়মিত খেলে দৈনিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি নানান স্বাস্থ্যঝুঁকিও কমায়।
প্রদাহের বিরুদ্ধে কাজ করে:
নিউ ইয়র্ক’য়ের পুরষ্কার প্রাপ্ত পুষ্টিবিদ টবি এমিডোরের মতে, সূর্যমুখীর বীজে রয়েছে মনোআনস্যাচুরেইটেড এবং পলিআনস্যাচুরেটেড চর্বি। প্রতি আউন্স সূর্যমুখীর বীজে প্রায় ৩ গ্রাম পরিমাণ মনোআনস্যাচুরেইটেড ও ৯ গ্রাম পলিআনস্যাচুরেটেড চর্বি পাওয়া যায়।
এসব চর্বি উচ্চ মাত্রায় থাকায় তা প্রদাহ কমায়।
হৃদস্বাস্থ্য ভালো রাখে:
সার্কুলেশন’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে এমিডর জানান, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যারা বেশি সূর্যমুখীর বীজ (Mixed Seeds)খেয়েছিলেন তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি এবং ঝুঁকি সৃষ্টিকারী উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস পেতে দেখা গেছে।।
একইভাবে, সূর্যমুখীর বীজ রক্তচাপ কমায়। রক্তচাপ খুব বেশি হলে তা ধমনীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এটা হার্ট অ্যাটাক বা হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
এক আউন্স সূর্যমুখীর বীজে ৭.৪ মি.লি. গ্রাম ভিটামিন ই থাকে যা দৈনিক চাহিদাপূরণ করে। আর ভিটামিন ই গ্রহণ হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
‘আমেরিকান জার্নাল অব থেরাপিউটিস’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া দীর্ঘস্থায়ী হৃদরোগ ও মধ্য বয়সে নারী-পুরুষদের হওয়া নানান রোগ থেকে সুরক্ষিত রাখতে সহায়তা করে।
ডায়াবেটিকদের রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ:
কিউরিয়াস জার্নাল অব মেডিকেল সায়েন্স’য়ে প্রকাশিত ‘মেডিসিন সার্ভিসেস হসপিটাল লাহোর’ ও ‘ডায়েট অ্যান্ড নিউট্রিশন, ইউনিভার্সিটি অফ লাহোর’য়ের করা গবেষণার ফল অনুযায়ী, সূর্যমুখীর বীজে রয়েছে ‘ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড’, যা রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
অন্য গবেষণায় দেখা গেছে, সূর্যমুখীর বীজ ‘গ্লাইসেমিক’ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। মানে এই বীজে রয়েছে ডায়াবেটিস-রোধী উপাদান।
পুষ্টিবিদ এমিডর ‘জার্নাল অফ কেমিকেল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিকেল রিসার্চ’য়ে প্রকাশিত নিউ জিল্যান্ডের ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের করা সমীক্ষার ফলাফল থেকে জানায়, সূর্যমুখীর বীজ খাওয়া ডায়াবেটিকদের রক্তের শর্করার মাত্রা কমাতে সহায়তা করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, সূর্যমুখীর বীজ (Mixed Seeds)না খাওয়া ব্যক্তিদের তুলনায় যারা নিয়মিত খান তাদের দ্রুত রক্তের শর্করা হ্রাস পায় এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
তরমুজ বীজ
ড. খালেদা ইসলাম বলেন, তরমুজ শরীরে পানির সমতা রক্ষা করে। একটি তরমুজে প্রায় ৯১ শতাংশই পানি। ৭.৫ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট এবং চিনি ১০০ গ্রামের মধ্যে প্রায় ৬ গ্রাম থাকে। তরমুজে ক্যালরির পরিমাণ কম থাকে। ১০০ গ্রামের মধ্যে মাত্র ৩০ কিলো ক্যালরি থাকে শক্তি। এ ছাড়া ভিটামিন সি, ভিটামিন এ যেটা বিটা ক্যারোটিন হিসেবে থাকে, ভিটামিন বি৬ এর মত উপকারি ভিটামিন পাওয়া যায় তরমুজে। আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও প্রচুর পরিমাণ ফাইবার বা খাদ্য আঁশ থাকে। তরমুজের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি, যা শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে নানাভাবে সাহায্য করে। তরমুজে চিনির পরিমাণ কম থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য তরমুজ খাওয়া মোটামুটি নিরাপদ। তবে তা পরিমিত পরিমাণে খাওয়ার কথা বলেন এই পুষ্টিবিদ।
তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা
১. তরমুজে থাকা আয়রন রক্তস্বল্পতা দূর করতে সহায়ক।
২. প্রচুর ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় তরমুজে, যা হাড় ঠিক রাখে ও মজবুত করে।
৩. তরমুজে যে পরিমাণ পটাশিয়াম থাকে তা হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এ ছাড়া, ফাইবার বা খাদ্য আঁশের পরিমাণও অনেক বেশি। এটি হৃদযন্ত্রের অসুখ এবং শারীরিক নানা সমস্যা সমাধানে কাজ করে।
৪. তরমুজে লাইকোপ্যান থাকে, লাইকোপ্যানের কারণে এখানে যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে তা ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
৫. তরমুজে (Mixed Seeds)ক্যারোটিনয়েড চোখের নানা সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে, রাতকানা প্রতিরোধে কার্যকরী।