Arjun gura | অর্জুন গাছের ছাল গুঁড়া
অর্জুন গাছের ছাল গুঁড়া (Terminalia arjuna) আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অর্জুন গাছের ছাল বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যায় উপকারী, বিশেষ করে হৃদরোগ এবং রক্ত সঞ্চালন সম্পর্কিত সমস্যায়। এটি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি, এবং হার্বাল টনিক হিসেবে কাজ করে।
অর্জুন (Arjun) গুঁড়া মূলত অর্জুন গাছের ছাল বা বাকলের শুকনো গুঁড়া। অর্জুন গাছ সাধারণত স্যাঁতস্যাঁতে দোঁআশ মাটিতে হয়। নানান উপকারী স্বাস্থ্য গুণাগুণ এর জন্য ভেষজ শাস্ত্রে এর ব্যবহার হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। কথিত আছে বাড়িতে একটি অর্জুন গাছ থাকা আর চিকিৎসক থাকা একই কথা। চমৎকার স্বাস্থ্যগুণ সম্পন্ন এই গাছের আদি নিবাস বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কায়। বাংলাদেশের বেশিরভাগ অঞ্চলেই ঝাকড়া এই গাছের দেখা মিলে। ১৮ থেকে ২৫ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট এই গাছের ডালগুলো নিচের দিকে ঝুলানো থাকে। আর পাতাগুলো দেখতে অনেকটা মানুষের জিহ্বা আকৃতির, ফলগুলো পাঁচ খাঁজ বিশিষ্ট অনেকটা কামরাঙার মতন। ছাল খুব মোটা এবং ধূসর বর্ণের। এই ছাল আলাদা করে রৌদ্রে শুকিয়েই প্রস্তুত করা হয় অর্জুন গুঁড়া।
Table of Contents
Toggleঅর্জুন গাছের ছাল গুঁড়ার (Orjon gura) উপকারিতা:
অর্জুন গাছের ছাল গুঁড়া (Arjun gura) বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করতে পারে। এটি প্রাচীন Ayurvedic চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত। অর্জুন গাছের ছাল গুঁড়ার কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা হলো:
-
হৃদরোগ প্রতিরোধ:
অর্জুন গাছের ছাল গুঁড়া হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী। এটি হৃদযন্ত্রের কার্যক্রমকে শক্তিশালী করতে সহায়ক, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, প্রদাহ ইত্যাদির মতো হৃদরোগ সংক্রান্ত সমস্ত সমস্যা দূর করতে সহায়ক। এটি স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস করে। অর্জুন গাছের ছালের সাথে বন্য পেঁয়াজ একই পরিমাণ মিশিয়ে চূর্ণ বানান এবং এই চূর্ণের অর্ধেক চা চামচ হার্টের রোগীকে দৈনন্দিন দুধ সহযোগে পান করানো হলে রোগীর হৃদয়ের পেশি শক্তিশালী হবে। এটা হার্ট ব্লকেজের প্রতিরোধের জন্যও উপকারী। খাবার খাওয়ার পর প্রায় দুই চা চামচ বা প্রায় ২০ মিমি অর্জুনারিষ্ট অর্ধেক কাপ জলে মিশিয়ে দুই তিন মাস পান করলে প্রায় সব রকমের শারীরীক সমস্যার থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। -
অর্জুনের ছাল উচ্চ রক্তচাপ কমায়ঃ
অর্জুন গাছের ছাল গুঁড়া রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক, বিশেষত উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রে। এটি রক্তনালী সংকোচন কমিয়ে রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে। অর্জুন গাছের ছাল বেশ উপকারী বলে প্রমাণিত হয়েছে। আসলে তার বাকল, লিপিড ট্রাইগ্লিসারাইড স্তর হ্রাস করার মাধ্যমে কোলেস্টেরল হ্রাস করে। এই ছালের সেবন রক্ত প্রবাহের বাধা দূর করে। এর জন্য, অর্জুন গাছের ছালের এক চামচ পাউডার, দুই গ্লাস জলে অর্ধেক রয়ে যাওয়া পর্যন্ত গরম ক’রে সকালে ও সন্ধ্যায় পান করা উচিত। এই ভাবে বন্ধ ধমনী খুলবে এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস পাবে।
-
কোলেস্টেরল কমানো:
এটি রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়ক, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। -
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ:
অর্জুন গাছের ছালে (Arjun gura) অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ রয়েছে, যা শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সহায়ক এবং শরীরকে সুরক্ষিত রাখে। -
অন্ত্র ও পাচনতন্ত্রের স্বাস্থ্য:
এটি পাচনতন্ত্রের সমস্যা যেমন হজমে সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি কমাতে সহায়ক হতে পারে। -
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ:
কিছু গবেষণায় পাওয়া গেছে যে অর্জুন গাছের ছাল গুঁড়া রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। -
অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ:
অর্জুন গাছের ছাল গুঁড়া (Arjun gura) প্রদাহ কমাতে সহায়ক এবং শরীরের বিভিন্ন ধরনের প্রদাহজনিত সমস্যা যেমন আর্থ্রাইটিস বা সাইনোসাইটিস কমাতে সহায়ক। -
ত্বকের যত্ন:
এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন একনি বা ফোঁড়া কমাতে সহায়ক হতে পারে। অর্জুন গাছের ছালের প্রভাব অনেক ত্বকের সমস্যা দূর করতে কার্যকর। অর্জুন গাছের ছাল, বাদাম, হলুদ এবং কর্পূর সমান পরিমাণ মিশিয়ে, পিষ্ট করে, ত্বকের উপর প্রয়োগ করলে, মুখের সমস্ত বলিরেখা দূর হয় এবং মুখের ত্বক উজ্জ্বল হয়ে।
-
উন্নত চুলের জন্যঃ
চুলের বৃদ্ধির জন্য আমরা অর্জুন গাছের ছাল ব্যবহার করতে পারি। মাথার চুলের মধ্যে অর্জুনের গাছের ছাল এবং হেনার মিশ্রণ চুলে লাগানোর ফলে চুল সাদা থেকে কালো হয়। একই সাথে এটা চুল শক্তিশালী করে। -
মেদ দূর করতেঃ
অতিরিক্ত মেদ নিয়ে সমস্যায় ভোগা মানুষ প্রত্যহ সকাল, সন্ধ্যায় অর্জুনের গাছের ছালের মিশ্রণ পান করলে তাঁদের সমস্যা কমে যেতে পারে অনেকটাই। এটি এত দ্রুত কাজ করে যে মাত্র এক মাসের মধ্যেই আপনি আপনার মেদের উপর এর প্রভাব অনুভব করতে পারবেন।
ব্যবহারের পদ্ধতি:
অর্জুন গাছের ছাল গুঁড়া সাধারণত দুধ, জল বা মধু দিয়ে মেশানো হয়। দিনে এক বা দুইবার এটি গ্রহণ করা যায়, তবে ডোজ সম্পর্কিত পরামর্শের জন্য একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
সতর্কতা:
যদিও অর্জুন গাছের ছাল গুঁড়ার উপকারিতা অনেক, তবুও এটি ব্যবহারের আগে একজন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা ভালো, বিশেষ করে যদি আপনি অন্য কোনো ওষুধ গ্রহণ করেন বা গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী হন।